টেবিল অনুসারে দেখুন
ক) ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী তৈরি করার উদ্দেশ্য
কোনো নির্দিষ্ট তারিখে নগদান বহির উদ্বৃত্ত এবং ব্যাংকের হিসাব বিবরণীর উদ্বৃত্তের গড়মিলের কারণ দেখিয়ে যে মিলকরণ বিবরণী প্রস্তুত করা হয়, তাকে ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী বলে। নিচে ৪ টি উদ্দেশ্য লিখা হলো :
১। গড়মিলের কারণ নির্ণয় : ব্যাংক আমানতকারীর হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করেন কাজেই আমানতকারীর নগদান বহির ব্যাংক ঘরের উদ্বৃত্তের সাথে ব্যাংকে রক্ষিত হিসাব। বিবরণীর উদ্বৃত্তের সাথে মিল হওয়ার কথা কিছু কিছু লেনদেনের জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখে উভয় বহির সাথে গড়মিল দেখা দেয়। যেমন: আমানতকারী কর্তৃক চেকের টাকা আদায়ের জন্য জমা ব্যাংক চার্জ এবং মঞ্জুরিকৃত সুদ প্রভৃতি যে সমস্ত এন্ট্রির জন্য গড়মিল দেখা দেয় তা খুঁজে বের করে সমন্বয় করা প্রয়োজন।
২। প্রকৃত ব্যাংক জমার উদ্বৃত্ত নির্ণয় : নগদান বহির ব্যাংক ঘরের উদ্ধৃত্তের সাথে ব্যাংকে রক্ষিত হিসাব বিবরণীর উদ্বৃত্তের গড়মিলের এন্ট্রিগুলো সমন্বয়পূর্বক প্রকৃত ব্যাংক জমার উদ্বৃত্ত নির্ণয় করা হয়।
৩। হিসাবের গাণিতিক নির্ভুলতা : যেহেতু কিছু কিছু এন্ট্রির জন্য দুই বহির গড়মিল পরিলক্ষিত হয় সেই এন্ট্রিগুলো সমন্বয় পূর্বক হিসাবের গাণিতিক নির্ভুলতা প্রমাণ করা যায়।
৪। অভ্যন্তরীন নিয়ন্ত্রণ : অভ্যন্তরীন নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রধান উদ্দেশ্য।
৫। নিরীক্ষা কার্যে সহায়তা: হিসাব শুদ্ধভাবে নিরীক্ষা না হলে নিরীক্ষা কার্য সম্পাদন করা যায় না। কাজেই ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুতের মাধ্যমে নিরীক্ষা কার্য সম্পাদন করা সহজতর হয়।
(খ) নগদান বই ও ব্যাংক বিবরণীর উদ্বৃত্তের গরমিলের কারণ:
আমানতকারী তার ব্যাংক সংক্রান্ত লেনদেনগুলো নগদান বহিতে ব্যাংক কলামে লিপিবদ্ধ করেন। অনুরূপভাবে ব্যাংকও ঐ লেনদেন্যগুলো মক্কেলের হিসাব বিবরণীতে লিপিবদ্ধ করে থাকেন। কোন নির্দিষ্ট তারিখে নগদান বহির ব্যাংক কলামের উদ্বৃত্ত এবং মক্কেলের হিসাব বিবরণীর উদ্বৃত্ত সমান হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবে নাও হতে পারে। যে সমস্ত কারণে দুইটি হিসাবে গড়মিল দেখা দেয় তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো: নিচে ৬ টি কারণ লিখা হলো :
১। জমাকৃত চেক: আমানতকারী চেকের টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংকে প্রেরণ করলে তিনি তার নগদান বহির ব্যাংক কলামের ডেবিট পার্শ্বে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। ফলে নগদান বহিতে ব্যাংক ব্যালেন্স বেড়ে যায়। কিন্তু ব্যাংক উক্ত চেকের টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত মক্কেলের হিসাব বিবরণীতে লিপিবদ্ধ করেন না এ জন্যই দুইটি হিসাবের পার্থক্য দেখা দেয়।
২। ইস্যুকৃত চেক: আমানতকারী কোন কারণে পাওনাদারকে চেক ইস্যু করলে তিনি তার নগদান বহির ব্যাংক কলামের ক্রেডিট পার্শ্বে লিপিবদ্ধ করেন। ফলে নগদান বহির ব্যাংক উদ্বৃত্ত কমে যায়। পাওনাদার উক্ত চেকটি ব্যাংকে উপস্থাপন না করা পর্যন্ত ব্যাংক তার মক্কেলের হিসাব বিবরণীতে লিপিবদ্ধ করতে পারেন না। কাজেই দুইটি হিসাবের মধ্যে গড়মিল দেখা দেয়।
৩। ব্যাংক কর্তৃক সরাসরি আদায়: ব্যাংক আমানতকারীর পক্ষে লভ্যাংশ, বিনিয়োগের সুদ, প্রাপ্য হিসাবের টাকা সরাসরি আদায় করে আমানতকারীর হিসাবে ক্রেডিট করে অর্থাৎ ব্যাংকে আমানতকারীর জমা টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। কিন্ত আমানতকারী এই ঘটনা না জানা পর্যন্ত তার নগদান বহির ব্যাংক কলামে ডেবিট করতে পারেন না। ফলে এই দুই হিসাবের মধ্যে গড়মিল দেখা দেয়।
৪। ব্যাংক কর্তৃক সরাসরি পরিশোধ: ব্যাংক আমানতকারীর পক্ষ হয়ে বা তার স্থায়ী নির্দেশে প্রদেয় হিসাবের টাকা, গ্যাস বিল, পানি বিল, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি পরিশোধ করে মক্কেলের হিসাবে ডেবিট করে দেয় অর্থাৎ আমানতকারীর ব্যাংক ব্যালেন্স কমিয়ে দেয়| কিন্ত আমানতকারী এই ঘঁনা না জানা পর্যন্ত তার নগদান বহির ব্যাংক কলামে ক্রেডিট করতে পারেন না। ইহার ফলে এই দুই হিসাবের মধ্যে গড়মিল দেখা দেয়।
৫। ব্যাংকে জমাকৃত চেক ও প্রাপ্য নোটের অমর্যাদা: প্রাপ্য নোট এবং চেকের টাকা আদায়ের জন্য আমানতকারী তার ব্যাংকে জমা দিলে তিনি তার নগদান বহির ব্যাংক কলামে ডেবিট করে থাকেন] কিন্তু উক্ত নোট এবং চেকের টাকা আদায় না হলে ব্যাংক আমানতকারীর হিসাবে লিপিবদ্ধ করেন না। ফলে এই দুইটি হিসাবের মধ্যে গড়মিল দেখা দেয়।
৬। প্রদেয় নোট ও ইস্যুকৃত চেকের অমর্যাদা: প্রদেয় নোট পরিশোধের জন্য ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হলে বা চেক ইস্যু করা হলে আমানতকারী তার নগদান বহির ব্যাংক কলামের ক্রেডিট পার্শে এন্ট্রি দিয়ে থাকেন। কিন্তু ব্যাংক উক্ত নোট এবং চেকের টাকা পরিশোধ না করলে অর্থাৎ আমানতকারীর হিসাবে ডেবিট করলে উক্ত দুটি হিসাবের মধ্যে গড়মিল দেখা দেয়।